
রাঙামাটি, ৩০ ডিসেম্বর (ইউএনবি) – ৩২ বছরের জাহেদুল ইসলাম।নবম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ার পর বেশির ভাগ সময়ই তার কেটেছে ঘরের চার দেয়ালের মধ্যে। লোকচক্ষুর আড়ালেই রেখেছিল সে নিজেকে। তবে নিজেকে আড়ালে রাখার এই অধ্যায়ের শেষ হয়েছে জাহেদুলের। মুক্ত পরিবেশে আত্মনির্ভরশীল হওয়ার প্রচেষ্টায় সে এখন অনেকটাই সফল। নতুন করে বাঁচার স্বপ্নে বিভোর।
জাহেদুল একজন তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ। যাদের সমাজে পরিচয় হিজড়া হিসাবে।
রাঙামাটি শহরের জেনারেল হাসপাতাল সংলগ্ন এলাকায় বসবাসরত আবু বক্কর সিদ্দিক এবং ফাতেমা বেগম দম্পতির পাঁচ সন্তানের মধ্যে একজন জাহেদুল। পাঁচ ভাই বোনের মধ্যে অন্য চারজনই সাধারনভাবে বেড়ে উঠলেও জাহেদ পায় তৃতীয় লিঙ্গের পরিচয়।
রাঙামাটি শহরের রানী দয়াময়ী উচ্চ বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণিপর্যন্ত লেখাপড়া করলেও ধীরে ধীরে নিজেকে গৃহবন্দী করে ফেলে জাহেদ। মা-বাবা ভাইবোন ছাড়া অন্যকেউ জাহেদুলের তৃতীয় লিঙ্গের বিষয়টি না জানায় সে পরে একান্তই লোকচক্ষুর আড়ালে থাকার সিদ্ধান্ত নেয়।
জাহেদের এই অন্ধকার জগতে হারিয়ে যাওয়ার আগেই তার দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়েছে বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাক।
তার বিষয়ে জানার পর ব্র্যাকের কর্মীরা তাকে উদ্বুদ্ধ করে আত্মনির্ভরশীল হিসেবে নিজেকে তৈরি করতে। ব্র্যাকের “দক্ষতা উন্নয়ন কর্মসূচি” জাহেদকে ট্রেইলারিং এন্ড ড্রেস মেকিং ট্রেডে ছয় মাসের প্রশিক্ষণ দেয়। প্রশিক্ষণ চলাকালীনসময় তাকে দেয়া হয় ৪হাজার ৮০০টাকার প্রশিক্ষণ ভাতা।
ব্র্যাকের প্রশিক্ষণ নেয়ার পর জাহেদুল স্বপ্ন দেখেনতুন করে বাঁচার। ব্র্যাকের সহযোগিতায় রাঙ্গামাটি চট্টগ্রাম রুটের রানীরহাট নামক স্থানে একটি ট্রেইলারিংসপে ট্রেইলারিং মাস্টার হিসাবে তার কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে। সে এখন এই ট্রেইলারিংসপ থেকেই মাসে ৬ হতে ৭ হাজার টাকা আয় করছে।
তৃতীয় লিঙ্গের সদস্য হিসেবে বর্তমান সমাজে নিজেকে স্বাভাবিকভাবে মানিয়ে নেয়া কষ্টসাধ্য হলেও জাহেদ এখন সেই চেষ্টা করছে।
জাহেদ মা-বাবা ভাই বোন তাকে এখন উপার্জনক্ষম ব্যক্তি হিসেবে গণনা করছে। ব্র্যাকের পক্ষ থেকে জাহেদের পরিপূর্ণ পুনর্বাসনে দেয়া হচ্ছে সহযোগিতাও।